রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার নিয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান আমেরিকার
রাশিয়া ইউক্রেনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে এমন যেকোনও লক্ষণের জন্য সামরিক জোট ন্যাটোকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি বলছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে তার যুদ্ধের মাত্রা বৃদ্ধিতে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে এমন লক্ষণগুলোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র এবং তার ন্যাটো মিত্রদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কূটনীতিক এবং ডেপুটি সেক্রেটারি অব স্টেট ওয়েন্ডি শেরম্যান একথা বলেছেন। বুধবার (১৯ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থ রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি সেক্রেটারি অব স্টেট ওয়েন্ডি শেরম্যান মঙ্গলবার বার্ষিক ন্যাটো অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনের সময় ইউক্রেনে রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের লক্ষণ সম্পর্কে এই সতর্কতা জারি করেন। ২০০৪ সালে এই ধরনের সম্মেলন শুরুর পর এবারই প্রথমবারের মতো তা উত্তর আমেরিকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
শেরম্যান বলেছেন, ‘আমরা সকলেই দেখেছি এবং উদ্বিগ্ন যে, ভ্লাদিমির পুতিন যেটাকে অ-কৌশলগত ট্যাকটিক্যাল পারমাণবিক অস্ত্র হিসাবে বিবেচনা করেন তা (ইউক্রেনে) ব্যবহার করবেন বা উত্তেজনা বাড়ানোর জন্য এই ধরনের কিছু প্রদর্শন করতে প্রভাব ব্যবহার করবেন। এটি সম্পর্কে সতর্ক থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি আরও বলেন, গত ২৫ মার্চ রাশিয়া তার প্রতিবেশী বেলারুশে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। আর এই পদক্ষেপের মাধ্যমে আসলে কৌশলে সেই হুমকিই সামনে আনার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন পুতিন।
রয়টার্স বলছে, কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র যুদ্ধক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জনের জন্য বা সীমিত সামরিক লক্ষ্যবস্তুর বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়েছে। তবে প্রেসিডেন্ট পুতিন ইউক্রেনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিপ্রায় অস্বীকার করেছেন। যদিও রুশ বাহিনী কয়েক মাস ধরে পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে ভয়ঙ্কর লড়াইয়ে আটকে আছে এবং তা উভয় পক্ষের জন্য ব্যয়বহুল।
বেলারুশের সীমানার উত্তরে লিথুয়ানিয়া ও লাটভিয়া রয়েছে এবং পশ্চিমে পোল্যান্ডের সাথে সীমান্ত রয়েছে। ন্যাটোর পূর্ব দিকের সীমান্তের এই সকল অংশ ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পরে অতিরিক্ত সৈন্য এবং সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে শক্তিশালী করা হয়েছে।
এদিকে ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল জেনস স্টলটেনবার্গ বেলারুশে পুতিনের কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপনের পরিকল্পনাকে ‘বিপজ্জনক, দায়িত্বজ্ঞানহীন পারমাণবিক পদক্ষেপ’ হিসাবে অভিহিত করেছেন। এমনকি ‘তারা (রাশিয়া) যা করছে তা ন্যাটো জোট খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করছে’ বলেও জানিয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, বেলারুশ হচ্ছে ইউক্রেন সীমান্তবর্তী রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ একটি মিত্র দেশ। বেলারুশিয়ান সরকার ক্রেমলিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং ইউক্রেনে রুশ আক্রমণের কট্টর সমর্থক। এছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে বছরজুড়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে সমর্থন করেছেন বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো।
প্রেসিডেন্ট পুতিন গত মার্চে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে বলেন, বেলারুশের নেতা আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো দীর্ঘদিন ধরে বেলারুশে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপনের বিষয়টি তার কাছে উত্থাপন করেছেন।
পুতিন সেসময় আরও বলেন, ‘এখানে অস্বাভাবিক কিছু নেই। প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্র কয়েক দশক ধরে এটি করে আসছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে তাদের মিত্র দেশগুলোর ভূখণ্ডে তাদের কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপন করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাশিয়া আগামী ১ জুলাইয়ের মধ্যে বেলারুশে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রের স্টোরেজ সুবিধার নির্মাণ কাজ শেষ করবে।’
অবশ্য ঠিক কবে নাগাদ অস্ত্রগুলো বেলারুশে স্থানান্তর করা হবে তা ভ্লাদিমির পুতিন উল্লেখ করেননি। তবে এই ঘোষণা বাস্তবে রূপ নিলে ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে প্রথমবারের মতো দেশের বাইরে পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপন করবে রাশিয়া।
আওে পড়ুন: চাঁদরাত রাঙাবেন মেহরীন