বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বার। ছবি: সংগৃহিত
পৃথিবী বড় নিষ্ঠুর! পৃথিবী বড় মায়ার। পৃথিবী খুব শান্তির। পৃথিবী খুব অশান্তির। বিচ্ছেদের আত্মপীড়নে কখনও অনেক মানুষ পৃথিবীকে জ্বালাময়ী বলে অসহ্য মনে করে। অপ্রত্যাশিত ভাবে একান্ত আপনজন যখন চিরতরে হারিয়ে যায় তখন সত্যি হৃদয়ে ঝড় উঠে।
অসহ্য দুনিয়ার ব্যথিত হৃদয়ে রিক্তের হাহাকারে গুমরে গুমরে কাঁদে শোকাহত মন। স্মৃতির মনিকোঠায় আত্মদর্শনে হৃদপিন্ডে হয় রক্তক্ষরণ। শোক পাখি উড়ে উড়ে কেবলি গেয়ে যায় বিরহের গান....। ক্ষনস্থায়ী পথিবী থেকে সবাই একে একে বিদায় হবে। ফুটন্ত ফুল যেমন প্রতিনিয়ত ঝরে যায় তেমনি মানুষও একে একে জগত থেকে ঝরে যাবে।
এটা সৃষ্টির শ্বাশত বিধান। আর এ শ্বাশত ধারায় অকালে এমন কিছু প্রাণ হারিয়ে যায় যাঁদেরকে ভুলা যায় না, তাঁদের জন্য খুবও কষ্ট হয়, হৃদয়ে জ্বালা হয়। তেমনি আমাদের মাঝ থেকে এমন একটি মানুষ হারিয়ে গেছে যার কথা বার বার স্মরণ হয়। যাঁর মুখে সব সময় একটা সরলতার হাসি থাকত। যার মনটা ছিল খুব সাদামাটা।
দেশ প্রেমের তীর তাড়ণে যৌবনে যে মানুষটি ছুটে গিয়েছিল বাঙ্গালি জাতির মুক্তিসংগ্রামে, যে মানুষটি গানের আসর মাতিয়ে রাখত,গানের সংগে যার ছিল গভীর ভালবাসা। এক সময় খেলার মাঠে ফুটবল প্রতিযোগীতায় যার ছিল অদ্যম উৎসাহ। গভীর রাত জেগে জেগে নিজের প্রানের চেয়েও সংগীতের সাধনায় দেহ মনে সৃষ্টি হতো আধ্যাতিক অনুভূতি, সেই গানের সাধক, সেই দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা 'আব্দুল জব্বার' আজ আর আমাদের মাঝে নেই।
কোন দিন আর তাঁর সেই হাসিমাখা মুখ দেখতে পাব না। সে আর গান গাইতে আসবে না। কৌতুক অভিনয় করে সে আর আমাদেরকে হাসাবে না। শেষ পর্যন্ত সে শুধু আমাদেরকে কাঁদায়েই গেল। মুক্তিযুদ্ধের গর্বিত গ্রাম জুড়াইল। নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলাধীন নওপাড়া ইউনিয়নের সর্ব বৃহৎ গ্রাম জুড়াইল।
১৯৭১ এ সবুজ সুন্দর এই গ্রাম থেকে আমরা নয় জন যুবক মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহন অংশ গ্রহন করেছিলাম। কেন্দুয়া উপজেলা আর কোন গ্রামেই নয় জন মুক্তিযোদ্ধা নেই, আর এই নয় জনের মধ্যে আব্দুর জব্বারই প্রথম আমাদের ছেড়ে মরন পাড়ে চলে গেছে। তার করুন মৃত্যুতে আমরা শোকাহত, মর্মাহত, কোন দিন আমরা তাঁকে ভুলতে পারব না।
ছোটবেলা থেকেই আব্দুল জব্বার গান, খেলা, অভিনয় এসবের প্রতি আকৃষ্ট ছিল। গানের সাধনা শেষ পর্যন্ত তাঁকে টেলিভিশনের পর্দায় নিয়ে যায়। সে বাংলাদেশের টেলিভিশন নিয়মিত মরমী কন্ঠ শিল্পী, বাংলাদেশে আওয়ামীলীগের এক নিষ্ঠ কর্মী, এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নওপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের কার্যকরী কমিটির সহ-সভাপতি তিন বার, কেন্দুয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এর কমান্ডারের অর্থ কমান্ডার, কেন্দুয়া ঝংকার শিল্পী গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, শিখন শিল্পী গোষ্টির সভাপতি, ৯নং নওপাড়া ইউনিয়নের ভি.ডি.পি দলপতি এবং তাঁর সুন্দর কর্মকান্ড চির স্মরনীয় হয়ে থাকবে। এই সহজ সরল মানুষটিকে পৃথিবী সহ্য করল না। তাঁর অকাল মৃত্যু হলো ২০০০ সালের ১লা ডিসেম্বের রোজ শুক্রবার। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪:৪০ মিনিটে তাঁর আত্মা শেষ নিঃশ্বাস ছেড়ে চির বিদায়ের গান গেয়ে গেয়ে অনন্তের পথে হারিয়ে যায়। ২রা ডিসেম্বর রোজ শনিবার বেলা ২:৩০ ঘটিকায় তাঁকে জুড়াইল খেলার মাঠে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিয়ে নামাজের যানাজা হয় এবং রাত ১১:৪০ মিনিটে সমাহিত করা হয়।
মুক্তিযোদ্ধারা বাঙ্গালী জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান' এ পদময্যাদা যথার্থ মূল্যায়ন করে বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তনায় আর্ন্তজাতিক বিশ্বের সম্মানিত নেত্রী মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও জনগনের উন্নয়নের ভুমিকার জন্য যিনি কায়রো আফ্রো এশীয় মানবাধিকার সংক্রান্ত আইনজীবি ফেডারেশনের সভাপতি ড. এসবেত মারঘানি কর্তৃক এশিয়ার শ্রেষ্ট ব্যাক্তিত্বের পুরস্কার প্রাপ্ত হয়েছেন সেই জননেত্রী শেখ হাসিনা। এক জন মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় সম্মানের বিধান বাস্তবায়িত করে জাতির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারাকেই উজ্জ্বল করেছেন।
সরকারের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। মরহুম আব্দুল জব্বারের আত্মার শান্তি কামনা করি। পরম স্রষ্টার প্রতি ফরিহাদ, হে প্রভু, তাঁর পাপ তাপ ক্ষমা করো, তাঁকে তোমার চিরশান্তির স্বর্গ উদ্যানে স্থান দান করো, নিশ্চয়ই তুমি ক্ষমাকারী।