নারী ক্রেতাদের দখলে ফুলবাড়ীর ঈদ বাজার
পবিত্র মাহে রমজানের প্রথম দু’দশক পেরিয়ে গেছে। সমাপনী প্রান্তিক এখন যেনো সবকিছুই চলছে দৌঁড়ের মাথায়। আর মাত্র ৫/৬দিন পরই পবিত্র ঈদুল ফিতর। মুসলমানদের প্রধান এ ধর্মীয় উৎসবে মেতে উঠবে সারাদেশ। বাঁধ ভাঙা আনন্দে ঘরে ঘরে রান্না হবে মজাদার সব খাবার। তবে ঈদ আনন্দে এর চেয়েও বড় অনুসঙ্গ হলো ধনী-গরীব ভেদাভেদ ভুলে নতুন জামায় নিজেকে সাজানো। আর তাই তো বাহারি সব নতুন পোশাকে নিজেকে রাঙাতে, নতুন পোশাক কিনতে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর মার্কেটগুলো হয়ে উঠেছে জমজমাট।
বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ, চাকুরিজীবিদের হাতে টাকা-পয়সাও কিছু এসেছে। কেনাকাটার জন্য হাতে আছে আর মাত্র কয়েকটি দিন বাঁকি। তাই শেষ সময়ের অপেক্ষা না করে আগেভাগেই কেনাকাটা শেষ করছেন অধিকাংশ মানুষ। তাই সর্বসাধারণের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে ফুটপাত থেকে শুরু করে অভিজাত বিপণীবিতানগুলো।
কোথাও কোথাও আবার ক্রেতা-দর্শনার্থীদের পদচারণায় তিল পরিমাণ ঠাঁই নেই বললেই চলে। আর ঈদের কেনাকাটার সময় সর্বত্রই নারী ক্রেতাদের আধিক্য। যেনো জমজমাট ঈদবাজার নারীদের দখলে। নারী ক্রেতা-দর্শনার্থীদের মধ্যে তরুণীদের ভিড় লক্ষ্যণীয় ছিল সবচেয়ে বেশি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুরুষেরা এসেছেন ক্রেতা হিসেবে নয়, নারীদের সহযোগী হিসেবে। ঈদের বাজার জমজমাট থাকায় দোকানীদের মুখে ছিল দারুণ হাসি।
সরেজমিনে দেখা যায়, পৌর বাজারের অভিজাত ও মধ্যবিত্তের এসব মার্কেটের পাশাপাশি বাহারি পোশাকের সমাহার নিয়ে সেজেছে ফুটপাত ও মৌসুমী দোকানগুলো। অভিজাত, মধ্যবিত্ত ও ফুটপাতের প্রতিটি বিপণী দোকানেই সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত লক্ষ্য করা যায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের সমাগম। তবে দুপুরের পরপরই এ সমাগম আরো সরব হয়ে ওঠে। বিকাল ৫টা বাজতে না বাজতেই মার্কেটগুলোতে একাধারে লক্ষ্য করা যায় জনতার রীতিমতো ঢল।
এদিকে বিভিন্ন মার্কেটে ঘুরে দেখা গেছে ভারত, পাকিস্তানিসহ বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন নামীয় ডিজাইনের পোশাক শোভা পাচ্ছে দোকানগুলোতে। রয়েছে দেশীয় ফ্যাশান হাউজগুলোর নিজস্ব ডিজাইনের পোশাকের সমারোহ। ক্রেতাদের আগ্রহ সারারা-গারারা, বারবীসহ ভারতীয় পোশাকে।
পোশাকের দিকেই বেশ আগ্রহ বলে জানালেন ক্রেতারা। গত কয়েক বছর ধরে ভারতীয় চিকনি চামেলি, মাসাককালি, লুঙ্গিড্যান্স ও ঝিলিক, পদ্মাবতী, কিরণমালা, পাখি, কটকটিসহ ভিন্ন ভিন্ন নামে পোশাক ক্রয় করতে দেখা গেছে।
বিপণী ব্যবসায়ী পৌরবাজারের লাকী বস্ত্রালয়ের সত্ত্বাধিকারী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ভারতীয় পোশাকের চাহিদা বেশ। সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে ‘সারারা-গারারা ও বারবি’ ডিজাইনের আধুনিক পোশাক। তরুণীদের ভিড় জমছে সবচেয়ে বেশি।
ভারতীয় এসব পোশাক বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকার মধ্যে। মার্কেট ভেদে মেয়েদের বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ড্রেস ২ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা, বিভিন্ন শাড়ি ১ হাজার ৫০০ থেকে ৭ হাজার টাকা, জামদানি শাড়ি ৫ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা, ছেলেদের শার্ট বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৪ হাজার টাকায়, জিন্স প্যান্ট ৬০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা, টি-শার্ট ২৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা।
আর শিশুদের জন্য থ্রি-কোয়ার্টার ও জিন্স প্যান্ট ২৫০ থেকে ৩ হাজার টাকা, গেঞ্জির সেট ৪০০ থেকে ২ হাজার টাকা, ফ্রক ও টপস ৬০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, ছেলে ও মেয়ে উভয় শিশুদের জন্য হাতাকাটা গেঞ্জি ২০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে কমদামে চাহিদামতো পোশাক কিনতে নিম্ন্নবিত্তরা ভিড় করছেন ফুটপাতের দোকানে। ক্রেতাদের আগমনে বেশ খুশি বিক্রেতারাও। আর কম দামে চাহিদামতো পোশাক কিনতে পেরে ক্রেতারও যথেষ্ট সন্তুষ্ট। ফুটপাতের দোকানগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৪০০ টাকায় জিন্সের প্যান্ট, ২৫০ টাকায় পোল টি-শার্ট। তাছাড়া কম দামে গ্যাবাডিন প্যান্ট, বাহারি রঙের কলার ও গোল গলার গেঞ্জি, ফতুয়া, জুতা, শার্ট, প্যান্ট ও শার্টের পিস কিনতে পারছেন ক্রেতারা। রয়েছে গারদ, সুতি, সিল্কসহ সবধরণের পাঞ্জাবির সমারোহ। আর মেয়েদের জন্য আছে টপস, শর্ট ওড়না, থ্রি-পিস, শাড়ি। ফুটপাতে টপস ২৫০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। আর শর্ট ওড়না পাওয়া যাচ্ছে ১০০ টাকায়, শাড়ি ৬০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ১০ কেজি চাল বিতরণ
কংকনা রায়